যান্ত্রিক আবহবিকার (Physical weathering)
উষ্ণতার পরিবর্তন, শিলাস্তরে চাপ হ্রাস বৃদ্ধি, আদ্রতার পরিবর্তন ইত্যাদির প্রভাবে শিলাস্তরের উপরিভাগ যান্ত্রিকভাবে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়, একে যান্ত্রিক আবহবিকার বলে।
এই ধরনের আবহবিকার বিভিন্নভাবে হয়-
উষ্ণতার পরিবর্তনে যান্ত্রিক আবহবিকারঃ
প্রস্তর চাই খন্ডীকরণঃ

শিলা তাপের কুপরিবাহী হওয়ায় দিনের বেলায় সূর্যকিরণ শিলার উপর উত্তপ্ত হয়ে প্রসারিত হয় এবং রাতে তাপ বিকিরণ করে সংকুচিত হয়। কিন্তু, শিলাস্তরের নিন্ম অংশে সংকোচন প্রসারণ ঘটে না। যার ফলে, শিলাস্তরের উপরের অংশ ও নিম্ন অংশের মধ্যে সংকোচন ও প্রসারণের অসমতা লক্ষ্য করা যায়। এই অসমতা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে শিলার মধ্যে পীড়নের সৃষ্টি হয় এবং একসময় শিলা উলম্ব ও সমান্তরালভাবে ফাটল ধরে এবং শিলাখণ্ড গুলো বৃহৎ খন্ডে বিভক্ত হয়। একে প্রস্তর চাঁই খন্ডিকরণ বা পিণ্ড বিশরণ বলা হয়। সাধারণত মরুভূমি অঞ্চলের গ্রানাইট শিলা স্তরে এই প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। ক্ষুদ্র কণা বিশরণঃ
শিলা বিভিন্ন খনিজ পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত। এই সমস্ত পদার্থের তাপগ্রাহিতা ও সংকোচন-প্রসারণের হার সমান নয়। ফলে দিনের বেলা সূর্যের তাপে শিলা মধ্যস্থ বিভিন্ন খনিজ পদার্থ গুলি বিভিন্ন হারে প্রসারিত হয় এবং রাতে সেগুলি বিভিন্ন হারে সংকুচিত হয় এর ফলে শিলাস্তরের মধ্যে অসম সংকোচন-প্রসারণ এর সৃষ্টি হয় এবং সৃষ্টি হয়। সবশেষে শিলাস্তর একসময় বিশাল আওয়াজ করে ফেটে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ পরিণত হয়। একে ক্ষুদ্র কণা বিস্মরণ বলে।
উষ্ণ মরুভূমি অঞ্চলে গ্রানাইট জাতীয় শিলাস্তরে এই প্রক্রিয়া দেখা যায়।

শল্কমোচনঃ
শিলাস্তর তাপের কুপরিবাহী হয় বাইরের অংশ দিনের বেলায় প্রবল উষ্ণতায় প্রসারিত হয় এবং রাতের বেলায় সংকুচিত হয়। কিন্তু ভিতরের অংশ প্রসারিত সংকুচিত হতে পারেনা। ফলে শিলাস্তরের বাইরের অংশ ও ভিতরের অংশের মধ্যে সংকোচন-প্রসারণের একটি ব্যবধান লক্ষ্য করা যায় এবং একসময় শিলাস্তরের বাইরের অংশ পেঁয়াজের খোসার ন্যায় খুলে আসে। পরবর্তীকালে বায়ুপ্রবাহে খুলে যাওয়া অংশগুলো অপসারিত হয়। এই ঘটনাকে শল্কমোচন বলা হয়।
মরুভূমি ও শুষ্ক অঞ্চলের কেলাসিত শিলায় এই ধরনের আবহবিকার লক্ষ্য করা যায়।

কেলাসন আবহবিকারঃ
তুহিন খন্ডীকরণঃ
উঁচু পর্বতের উপর বৃষ্টির বা বরফ গলা জল শিলাস্তরের ফাটলের মধ্যে ঢুকে যায় এবং রাতে ঠান্ডায় বরফে পরিণত হয় ও আয়তন বৃদ্ধি পায়। ফলে পাশের দেয়ালে প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি হয় এবং শিলাস্তর টি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। একে বলা হয় তুহিন খন্ডীকরণ।

লবণের কেলাস গঠনঃ
শিলাস্তরের মধ্যে উপস্থিত লবণ বৃষ্টির জলে ধৌত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিলাস্তরের প্রবেশ করে। পরে অত্যাধিক উষ্ণতায় লবণের দ্রবণ বাষ্পীভূত হলে ওই লবণ প্লাসিত লবণে রূপান্তরিত হয়ে প্রবল চাপ সৃষ্টি করে ও শিলার বিচূর্ণীভবন ঘটায়।
শুষ্ক অঞ্চলের বেলেপাথরে এই ধরনের যান্ত্রিক আবহবিকার লক্ষ্য করা যায়।
স্লেকিংঃ
ক্রমান্বয়ে আর্দ্র এবং শুষ্কতার ফলে শিলার বা খনিজের যে পরিবর্তন হয় তাকে স্লেকিং বলে।
চাপ হ্রাস জনিত আবহবিকারঃ
শিটিংঃ
কোন শিলার ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে ফাটলের মাধ্যমে পাতলা পাতলা স্তরে ভাগ হয়ে যাওয়ার প্রবণতাকে শিটিং বলে।
স্প্যালিংঃ
শিলাস্তরের পাতলা স্তর গুলি সাধারণত পাতলা ও চওড়া হয়। কিন্তু, গুহায় এই পাতলা ও চওড়া পাতের পরিবর্তে টুকরো টুকরো খন্ডে বিভক্ত হয়ে শিলার উপরের স্তর খুলে আসে, একে স্প্যালিং বলে।